৩৫০ বছর পর ভারতে ফিরছে ‘বাঘনখ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ১, ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

৩৫০ বছর পর ভারতে ফিরছে ‘বাঘনখ’

সংগৃহীত ছবি

এ বছর পালিত হচ্ছে ছত্রপতি শিবাজির রাজ্যাভিষেকের ৩৫০তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে তিন বছর ধরে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে (জাদুঘর) বাঘনখের প্রদর্শন শেষে এটিকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

‘বাঘনখ’ হলো ভারতীয় উপমহাদেশে অদ্ভুদ একটি করতালু আকৃতির অস্ত্র৷ অস্ত্রটি এমনভাবেই তৈরী যেন তা ধারকের আঙুলের গাঁট বা অঙ্গুলিপর্ব ভালোভাবে এঁটে থাকতে পারে এবং সহজেই তা তালুর নিচে লুকিয়ে রাখা যায়৷ এটিতে পাঞ্জাদস্তানাতে আটকানো চার থেকে পাঁচটি বাঁকা ধারালো অস্ত্রফলক রয়েছে, যা সহজেই চামড়া ও পেশিতে লম্বা-সরু ক্ষত তৈরী করতে পারে৷ মনে করা হয়, বনবিড়ালের আত্মরক্ষা ও আক্রমনপদ্ধতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই অস্ত্রটি নির্মিত এবং "বাঘনখ" শব্দটির আক্ষরিক বাংলা অর্থও বাঘের নখ বা বাঘের থাবা৷

 বাঘনখের প্রচলন ঠিক কোন সময়ে হয়েছিলো তা নিয়ে একাধিক বিতর্ক ও মতানৈক্য থাকলেও মূলত রাজপুত জাতি গুপ্তহত্যার জন্য বিষাক্ত করা বাঘনখের ব্যবহার করতো৷ এই নখ  জনপ্রিয়ভাবে   মারাঠা   সম্রাট ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ ব্যবহার করেছিলেন ৷ তিনি ১৬৫৯ সালে বিজাপুর সালতানাতের আফজল খানকে এ বাঘনখের সাহায্যেই পরাজিত করেছিলেন । এই বাঘনখ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।

এটি নিহঙ্গ শিখদের খুবই জনপ্রিয় একটা অস্ত্র৷ তারা সাধারণত একটি বাঘনখ তাদের দীর্ঘায়িত পাগড়িতে ও একটি তাদের বাম হাতে রাখে এবং কোনো সংঘর্ষের কালে বা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ডান হাতে তরোয়াল ব্যবহার করে৷

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক ছেচল্লিশের দাঙ্গার পরে বাঙালি হিন্দু মেয়েরা আত্মরক্ষার তাগিদে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া অবধি একধরনের ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিদ্যালয় বা অন্যকোনো কার্যালয়ে যেতো, যা দেখতে বাঘনখের মতোই ছিলো৷

ছত্রপতির ব্যবহৃত ‍‍`বাঘনখ‍‍` পরবর্তীকালে ইস্ট কোম্পানির শাসনকালে ইংরেজদের হাতে চলে যায়। সাথে সাথে সেটিকে ব্রিটেনে পাঠানো হয়। সেখানকার জাদুঘরে স্থান পায়  ঐতিহাসিক এই হাতিয়ার। 

অবশেষে মারাঠি রাজা ছত্রপতি শিবাজির ‘বাঘনখ’ ৩৫০ বছর পর ভারতে ফিরছে। যুদ্ধে ব্যবহৃত বিশেষ এই অস্ত্র আগামী নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভারতের মহারাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হবে।

বাঘনখটি ফিরিয়ে আনতে এ-সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকে সই করবেন মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী সুধির মুঙ্গান্তিবার। এ জন্য আগামী মঙ্গলবার তাঁর লন্ডনে যাওয়ার কথা।

ধারণা করা হচ্ছে, বাঘনখটি ফিরিয়ে আনার পর সেটিকে দক্ষিণ মুম্বাইয়ে অবস্থিত ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ জাদুঘরে রাখা হবে।

 

Link copied!